
শায়খুল হাদিস, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন আশরাফীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
শায়খুল হাদিস, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন আশরাফী ১৯৬৪ সালের ১লা মার্চ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী বংশে জম্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতার নাম কাজী ফজলুল কুদ্দুস এবং মাতার নাম ছালেহা বেগম।তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।তিনি আক্বিদা বিশ্বাসে সুন্নী, মাযহাবে হানাফী।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
শায়খুল হাদিস কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন আশরাফী ১৯৭৬ সালে নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউসিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। ১৯৭৮ সালে একই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন তিনি।আলিম পরীক্ষার জাতীয় মেধাতালিকায় তাঁর অবস্থান ছিল দ্বাদশ।১৯৮০ সালে তিনি চট্টগ্রামের ছোবহানিয়া আলীয়া কামিল(এম.এ.) মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেন।অতঃপর,১৯৮২,১৯৮৬ ও ১৯৯৯ সালে যথাক্রমে ছোবহানিয়া আলীয়া কামিল(এম.এ.) মাদ্রাসা থেকে হাদিস, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফিকহ ও ছিপাতলী জামিয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল(এম.এ.) মাদ্রাসা থেকে তাফসীর এর উপর পৃথকভাবে তিনটি কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন,যেখানে তাফসীর বিভাগে জাতীয় মেধাতালিকায় তাঁর স্থান ছিল দশম।
শিক্ষাজীবন শেষে তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ছোবহানিয়া আলীয়া কামিল(এম.এ.) মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।বর্তমানে তিনি একই মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছেন।তিনি আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থার (OAC) উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন(১৯৯৯) এবং বর্তমানে তিনি একই পদে দ্বায়িত্বরত আছেন। তিনি “বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা” র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।পরবর্তীতে “বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট” এ যুগ্ম আহবায়ক,প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন মেয়াদে দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি।তিনি ১২ই আগস্ট,২০২০ সাল থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত কেন্দ্রীয় পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁর তরিক্বতের পীর হচ্ছেন আলে রাসূল, আওলাদে গাউছে পাক,সরকারে কাঁলা সৈয়দ মুহাম্মদ মুখতার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী(রহঃ)। স্বীয় পীর থেকে তিনি ছিলছিলায়ে আশরাফীয়ার খেলাফত প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি তরীক্বত ভিত্তিক সংগঠন আঞ্জুমানে আশরাফীয়া চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর পরিচালনাধীন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহন করেছেন।এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(ﷺ) উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ইমাম প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।তিনি নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে গাউছিয়া আহমদিয়া হেফজ খানা ও আশরাফ জাহাংগীর(রঃ) ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
তিনি ১৯৮৭-২০০৯ ইং পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জস্থ ঐতিহাসিক হামিদুল্লাহ খাঁ মসজিদে খতীব হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ২০০৯ ইং থেকে আজ অবধি তিনি চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দ্বায়িত্বরত আছেন।
আন্দোলন:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে অনেকগুলো ধর্মীয় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ(ﷺ) কে নিয়ে ফ্রান্সে ব্যংগচিত্ প্রদর্শনের বিরুদ্ধে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ।
এছাড়া মহানবী(ﷺ) কে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হওয়া কটুক্তির প্রতিবাদে তাঁর নেতৃত্বে আরো কিছু প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
প্রকাশনা ও সম্পাদনা:
তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে “কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামের মূলধারা ও বাতিল ফিরকা” গ্রন্থটি সর্বাধিক প্রসার লাভ করে।এসব গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি “মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাত” ও “জ্ঞানের আলো” এর একজন নিয়মিত লেখক।